রাঙ্গুনিয়া নামকরণের ইতিহাস নিয়ে নানা মতবাদ আছে।
যেমন- আরাকানের রাজা মোগলদের সাথে পরাজিত হওয়ার পর, তারা সকল ধন সম্পদ পরিত্যাগ করে এ অঞ্চল ছেড়ে পালিয়ে যায়। এর পর থেকে এই অঞ্চলের নাম হয় রাইন্যা। উল্লেখ্য, মগদের ভাষায় রাইন্যা শব্দের অর্থ হলো পরিত্যক্ত। পরবর্তীতে রাইন্যা শব্দ থেকে রইন্যা তথা রাঙ্গুনিয়া শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।
এককালে এ অঞ্চল থেকে প্রচুর মানুষ বার্মার রেঙ্গুন শহরে চলে যেতো। এই কারণে এ অঞ্চলকে বলা হতো রেঙ্গুন্যা। কালক্রমে এর নাম হয়েছে রাঙ্গুনিয়া।
ঐতিহাসিক জনাব হামিদুল্লাহ খাঁ কর্তৃক ফার্সি ভাষায় চট্টগ্রামের প্রাচীন ইতিহাস আহাদিসুল খাওয়ানিন রচনা করেছিলেন। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। বর্তমানে এর এক কপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এই গ্রন্থে রাঙ্গুনিয়াকে রঙ্গীনা নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়ার বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও গবেষক মরহুম সৈয়দ আহমদুল হক রচিত প্রবন্ধ ‘বিচিত্রা’য় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফার্সি ভাষায় রঙ্গিনা শব্দের অর্থ হল রঙে রঞ্জিত অর্থাৎ সৌন্দর্য্য। তাঁর মতে, রাঙ্গুনিয়া ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমণ্ডিত মনোরম স্থান। তাই চিরহরিৎ অনুচ্চ শৈল শিখর ও কর্ণফুলি নদী বিধৌত এ অঞ্চল সুলতানী আমলে পরিচিত ছিল রঙ্গীনা নামে। পরবর্তীতে এই রঙ্গীনা শব্দ থেকেই রইন্যা বা রাঙ্গুনিয়া নামের উৎপত্তি হয়েছে।
১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে চাকমা রাজন্যবর্গের শাসনাধীন ছিল। এই রাজন্যবর্গের ভিতরে ছিলেন- শুকদেব রায়, শেরদৌলত খাঁ, জানবক্স খাঁ, টব্বর খাঁ, জব্বর খাঁ, ধরম বক্স খাঁ, রাণী কালীন্দি, হরিশচন্দ্র রায় প্রমুখ। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে চাকমা রাজা হরিশচন্দ্র রাজধানী রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর থেকে রাঙ্গামাটিতে স্থানান্তরিত করেছিলেন।
ব্রিটিশ শাসনামলে এই অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামের অংশে চলে আসে। পাকিস্তান শাসনামলে এই অঞ্চল চট্টগ্রাম জেলার অংশ ছিল। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি পটিয়া এবং রাউজান থানার কিছু অংশ নিয়ে রাঙ্গুনিয়া থানা প্রতিষ্ঠিত হয়।