আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের সবচেয়ে দীর্ঘ ফ্লাইওভার। এটি মুরাদপুর ফ্লাইওভার নামেও পরিচিত। ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত চার লেনের আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের মার্চে।
শুরুতে পাঁচ দশমিক দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এ ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪৬২ কোটি টাকা। পরে ফ্লাইওভারের দুই নম্বর গেইট এলাকায় নতুন একটি লুপ এবং জিইসি মোড় এলাকায় আরও একটি র্যাম্প যোগ হয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৯৮ কোটি টাকা।
২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ফ্লাইওভারটির মূল অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
নতুন প্রজন্মের জানা প্রয়োজন কে এই আখতারুজ্জামান চৌধুরী? যার নামে এই ফ্লাই ওভার?
আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু (৩ মে ১৯৪৫ – ৪ নভেম্বর ২০১২) ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও চার বারের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য ছিলেন। নবম জাতীয় সংসদে তিনি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০২১ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন
তিনি ১৯৬৭ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়া থেকে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।
স্বাধীনতার পর তিনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দল পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখায় কারাভোগসহ নির্যাতনের শিকার হন তিনি।
তিনি চট্টগ্রাম থেকে ১৯৭০, ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় তার পাথরঘাটা জুপিটার হাউস থেকে সংগ্রাম কমিটির কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামে আসার পর ওই হাউস থেকেই সাইক্লোস্টাইল করে প্রচার করা হয়। তার বাসা থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ সব জায়গায় পাঠানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি বিশ্বজনমত গড়তে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে যান। তিনি প্রথমে লন্ডনে যান। সেখান থেকে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে আমেরিকায় যান। ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৭২ সালে গঠিত বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য হন এবং বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ণে ভূমিকা রাখেন।
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
Comments