আফগান আমল : ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দে আফগান বীর শেরশাহ্ গৌড়ের সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহকে পরাজিত করে গৌড়ের সিংহাসন অধিকার করেন। ডক্টর আবদুল করিম বলেন, পর্তুগিজ বিবরণ এবং কবি মোহাম্মদ খানের সাক্ষ্যে দেখা যায় যে, শেরশাহ্ বাংলা জয় করিলেও এবং গৌড়েশ্বর হওয়ার গৌরব লাভ করিলেও তিনি মাহমুদ শাহের রাজ্যের অন্তত একটি অংশ চট্টগ্রাম দখল করিতে পারেন নাই।
অধ্যাপক আলী আহমদ বলেন যে, নোগাজিল হলেন শেরশাহ্ কনিষ্ঠ ভ্রাতা নিজাম শাহ্”। শেরশাহ্ নোগাজিল বা নিজাম শাহ্কে ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রামে প্রেরণ করেন। হামজা খাঁন (আমির্জা খাঁ), খোদাবাক্স খান ও পর্তুগিজগণ তাঁর বশ্যতা স্বীকার করলেন। তিনি মিরশ্বরাই থানার জাফরাবাদে রাজধানী স্থাপন করে চট্টগ্রাম শাসন করেন।
শেরশাহ্ ও তৎপুত্র ইসলাম শাহ্’র রাজত্বকালে চট্টগ্রাম অঞ্চল তাঁদের অধিকারভুক্ত ছিল। ১৫৪০-৪১ খ্রিষ্টাব্দে আরাকানরাজ মেং বেং (সুলতান জৌক পৌক শাহ্ ১৫৩১-৫৩ খ্রি.) দক্ষিণ চট্টগ্রাম দখল করে নেন। এদিকে ত্রিপুরার মহরাজ বিজয়মাণিক্য উত্তর চট্টগ্রাম অধিকার করে দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে আরাকানিদের বিতাড়িত করেন।
১৫৫৪ খ্রিষ্টাব্দে শেরশাহ্ জ্ঞাতি শামসুদ্দিন মোহাম্মদ শাহ্ গাজি পুনরায় সমগ্র চট্টগ্রাম অধিকার করে উত্তর আরাকান জয় করেন এবং আরাকানের রাজধানী থেকে মুদ্রা উৎকীর্ণ করেন।
কিন্তু পরের বছর দিল্লীর সাথে যুদ্ধে মোহাম্মদ শাহ্ গাজি নিহত হলে বিজয়মাণিক্য পুনরায় চট্টগ্রাম দখল করে নেন। সম্ভবত ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চট্টগ্রাম ত্রিপুরার অধিকারভুক্ত ছিল। ১৫৬৭-৬৮ খ্রিষ্টাব্দে সোলায়মান কাররানি (১৫৬৭-৭২ খ্রি.) ত্রিপুরাবাহিনীকে পরাজিত করে চট্টগ্রাম অধিকার করেন।
১৫৬৭-৭২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সোলয়মান কাররানির আমলে একখানি পাকা মসজিদ বাঁশখালী থানার “ইলসা’ গ্রামে নির্মিত হয়েছিল। ধ্বংসপ্রাপ্ত সে মসজিদের শিলালিপিখানি উক্ত গ্রামে পরবর্তীকালে নির্মিত বকশি হামিদের মসজিদের দেয়ালে স্থাপিত আছে।
১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে আফগান শাসনের পতন হলেও জামালখান পন্নীর অধীনে ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দ অবধি চট্টগ্রামে আফগান শাসন বলবৎ থাকে। কিন্তু ত্রিপুরা ও আরাকানিদের চাপের মুখে কেন্দ্রীয় শক্তিবিহীন চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন আফগান শাসন ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে ।
১. ড. আবদুল করিম, বাংলার ইতিহাস : সুলতানী আমল, পৃ. ৪৬৩
২. অধ্যাপক আলী আহমদ, ইমাম বিজয় পৃ. ৭৫-৭৬
৩. জে. এ. এস. পি. ৯ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা, ১৯৬৪, পৃ. ২৩-৩০
Comments