জব্বারের বলীখেলা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় লোকজ উৎসব। প্রায় ১০০ বছরের অধিক সময় ধরে চলে আসা এ উৎসব হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যমন্ডীত বৈশাখী উৎসবের অপূরণীয় অংশ।
প্রতিবছর বাংলা পঞ্জিকার ১২ তারিখ লালদিঘি ময়দানে চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আয়োজন হয় এ মেলার।
কুস্তিখেলাকে চট্টগ্রামেের লোকজ ভাষায় বলা হয় বলীখেলা। তবে বলী শব্দটি ভাবার্থে বলবান বোঝায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পর্যন্ত ছিলো বলীখেলার স্বর্ণযুগ। আসর চলত চৈত্র থেকে বৈশাখ পর্যন্ত। একসময় মিয়ানমার প্রবাসীরাই মূলত পৃষ্ঠপোষকতা করলেও পরবর্তীতে প্রথিতযশা অনেকেই যুক্ত হন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঢাকার নবাব আব্দুল গণি।
মুরুব্বীদের ভাষায় বলীর দেশ চট্টগ্রামে একসময় কর্ণফুলী ও শঙ্খ নদীর মধ্যবর্তী স্থানে ছিলো ২২টি মল্ল পরিবারের বাস।সুঠামদেহী ও প্রচন্ড দৈহিক শক্তির অধিকারি এ মল্লরাই ছিলেন এ খেলার প্রধান আকর্ষণ।জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকায় প্রতিযোগীরা চট্টগ্রামের আশপাশের জেলা নোয়াখালী, কুমিল্লা এসব জায়গা থেকে এরপর সারা দেশ থেকে আসতে শুরু করে। এমনকি একবার ফ্রান্স থেকে দুজন কুস্তিগীর এখানে অংশগ্রহণ করেছিলো।
যেভাবে এলো জব্বারের বলীখেলা : বিংশ শতাব্দী শুরুর দিকের কথা।পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের বিজয়ের পেরিয়ে গেছে ১০০ বছরেরও বেশি সময়।উপমহাদেশের মানুষ তখন প্রায় ভুলতে বসেছে নিজেদের স্বকীয়তা, ঐতিহ্য আর স্বাধীনতার মধুর স্বাদ। বাঙালি সংস্কৃতির আর ঐতিহ্যের সাঁঝবেলা নামলো অলক্ষ্যেই।
এর মাঝে ই বঙ্গভঙ্গ রদের পর তীব্র জাতীয়তাবাদের জন্ম হয় সাধারণ মানুষের মনে। বাদ থাকেন না রাজনীতির নিরব দশর্করাও। বিলেতি দ্রব্য বজর্ন করে স্বদেশী পণ্যের ব্যবহার, গ্রাম গঞ্জে স্বদেশী মেলার অনুষ্ঠান, বিদ্রোহী সাহিত্য রচনা এসবই নতুন এক আলোড়ন তোলে মানুষের মনে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের বদরপতির কংগ্রেসী ও স্বদেশী আন্দোলনের সংঘটক আব্দুল জব্বার মিয়াহ বলীখেলাকে প্রধান উপজীব্য করে লোকজ মেলার প্রথম আয়োজন করেন ১৯০৯ সালের ২৫ এপ্রিল। সেই থেকেই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় এই জব্বারের বলীখেলা। তবে এ আয়োজনের পেছনে তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং একই সঙ্গে বাংলার যুবসমাজের মাঝে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা ও শক্তি মত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানো।
বর্তমানে বলীখেলার আকর্ষণ কমলেও উপজীব্য হয়ে উঠেছে মেলা।প্রতি বছর সারা দেশ থেকে কুটির শিল্পী রা তাদের পণ্য, বাঁশ বেতের তৈরী সরঞ্জাম, মাটির হাঁড়ি পাতিল, পুতুল, আর নাগর দোলা,পুতুল নাচের মধ্যে মুখর হয়ে ওঠে মেলা।
জব্বারের বলী খেলার পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন স্থানে যেমন কক্সবাজারে ডিসি সাহেবের বলী খেলা, সাতকানিয়ায় মক্কার বলি খেলা, আনোয়ারায় সরকারের বলী খেলা, রাউজানে দোস্ত মোহাম্মদের বলী খেলা, হাটহাজারীতে চুরখাঁর বলী খেলা, চান্দগাঁওতে মৌলভীর বলী খেলা এখনও কোনরকমে বিদ্যমান।
খুবই প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন….ধন্যবাদ ❤️