ব্রিটিশ শাসনামল চলছে তখন। তোড়জোড় শুরু হলো কেতাদুরস্ত শাসন ব্যবস্থার, আর তার ই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সাতকানিয়া -বাঁশখালি আদালত ভবন নির্মাণের প্রস্তাবনা আসে। সমস্যা শুরু হয় যখন ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমির বরাদ্দ পাওয়াটা হয়ে পড়ে ভীষণ কঠিন। অনেক খোঁজের পর, জনৈক পাঠান নাম্নি জমিদার সাহেব সাত কানি জমি দান করলেন। পাঠান সাহেবের এ মহানুভবতার কথা মাথায় রেখেই ‘৭ কানি’ শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে সাতকানিয়া নামের উদ্ভব হয়।
সাতকানিয়া ও সোনাকানিয়া ইউনিয়নের দারোগা মসজিদ ও ডেপুটি মসজিদ (পঞ্চদশ শতাব্দী), ত্রয়োদশ শতাব্দীর মূর্তি সম্বলিত মুদ্রা ও ঠাকুর দীঘি (সাতকানিয়া), কোতওয়াল দীঘি (সোনাকানিয়া), শিবমন্দির (ঢেমশা), বোমং হাট গির্জা (বাজালিয়া), হিন্দুপাড়া মন্দির (কাঞ্চনা) এর মতো নিদর্শন গুলোই বলে দেয় এ অঞ্চল সমৃদ্ধ পৌরাণিক ইতিহাসে।
প্রায় দুই’শ বছর আগে সাতকানিয়ার মির্জাখীল গ্রামে হজরত মাওলানা মোখলেছুর রহমান জাহাঁগিরি (র:) মির্জাখীলদরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। হজরত এ অঞ্চলে হানাফি মাজহাবের প্রবর্তক। এছাড়া বায়তুশ শরফের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মীর মোঃ আখতার (রহঃ) আন্জুমানে ইখতাদ বাংলাদেশ এর মতো সংগঠন গড়ে তোলেন যা আজকে দেশে বিদেশে শত শত মাদ্রাসা, এতিমখানা, হাসপাতাল ও বিভিন্ন সেবামূলক কাজ পরিচালনা করে আসছে।
সাঙ্গু আর ডলু নদীর অববাহিকা আর বান্দরবানের পাদদেশে বৈরী আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠা মানুষ গুলোই ইতিহাস লিখেছেন নতুন করে ‘রত্নগর্ভা সাতকানিয়া’ নামের শুরুটা এখানেই।
মধ্যযুগের বাঙালি কবি আফজল আলী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং রাষ্ট্রপতির শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা আবুল ফজল, চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম সিটি কলেজের সাবেক অধ্যাপক আব্দুর রউফ চৌধুরীর মতো অগ্রজরাই শিক্ষার মশাল হাতে আলোকিতো করে গেছেন সাতকানিয়া তথা চট্টগ্রামকে।
১৯১৭ সালে সাতকানিয়া থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। ঐ সালেই সাতকানিয়া উপজেলা একটি স্বতন্ত্র উপজেলা হিসেবে পরিগণিত হয়।
একুশে পদকের মতো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পেয়ে দেশসেরা গুণিজনদের কাতারে নাম লিখিয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক আলমগীর মোঃ সিরাজুদ্দীন, সাংবাদিক আবুল মোমেন, সুকোমল বড়ুয়া। এছাড়াও বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে নিয়োজিতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আব্দুল মোমেন চৌধুরী (সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট), প্রকৌশলী আহমদ হোছাইন (বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সাবেক মহাব্যবস্থাপক)।
রাজনীতির অঙ্গনকে মুখর করেছেন আবু ছালেহ, আবু রেজা মোঃ নেজামুুদ্দিন নদভীর মতো ব্যাক্তিত্বরা।
সাতকানিয়ার পরিচয় তাই অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই, এ অঞ্চলের রত্নগর্ভা সন্তানেরাই গড়ে তুলেছে নতুন এক ইতিহাস জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
This post was created with our nice and easy submission form. Create your post!
Comments