in

সংক্ষেপে সীতাকুণ্ড

সংক্ষেপে সীতাকুণ্ড

সংক্ষেপে সীতাকুণ্ড: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উদার এবং মুক্ত প্রকৃতির ছন্দময় মুর্চ্ছনায়, দিগন্ত বিস্তারী গগনের সরল সৌহার্দ্যে গরিয়ান বীর চট্টলার উপকন্ঠ সীতাকুণ্ড। ইতিহাসের মহিমায় প্রোজ্জ্বল তার শত যোজনার সাগর গিরি নদীর আবেষ্টন। এখানকার মাটি আর মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবন ধারা মন ও প্রাণকে উদ্বেলিত করে। প্রায় ৩৫ কি.মি.বিস্তৃত সাগর সৈকতের প্রান্ত ছুঁয়ে আছে ঘন উপকুলীয় বন। সমুদ্র অবগাহনে মেতে উঠে নির্সগ। পূর্বে শ্যামলীমাময় বিচ্ছিন্ন সু-উচ্চ গিরিশৃঙ্ঘ পরিদৃশ্যমান ও বনসম্পদে সুশোভন, বিস্তৃত আবাসভুমি আর ফসলের অবারিত মাঠ। এ যেন কবির কবিতার উপপাদ্য শহর, পর্যটকের ধ্যানভূমি। পাহাড় আর সমুদ্র বেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সীতাকুণ্ড। সমুদ্রের কোল ঘেষে জাহাজভাঙ্গা শিল্প এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

সীতাকুণ্ডের পশ্চিমে তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সমুদ্র দ্বীপ সন্দ্বীপ চ্যানেল। পূর্বে শ্যামল মুর্তির পাহাড় – যে পাহাড়ের বুক চিড়ে রুপালী ঝর্ণাধারা বয়ে চলেছে সাগর পানে। সীতাকুণ্ডের সংলগ্ন ফঠিকছড়ি ও হাটহাজারী থানা, দক্ষিণে প্রাচ্যের রাণী খ্যাত বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানা, উত্তরে মীরসরাই থানা। সীতাকুণ্ডে মোট ০৯ টি ইউনিয়ন ও ০১ টি পৌরসভা বিদ্যমান।

চট্টগ্রাম নগরীর ৯ কি.মি. উত্তরে রাজধানী ঢাকা থেকে ২১৯ কি.মি.দক্ষিণে – ৩৫ কি.মি. দৈর্ঘ বিশিষ্ট গিরিসৈকতের মিলন কেন্দ্র বার আউলিয়ার পূণ্যভূমিতে ২২.৩৭অক্ষাংশ (উঃ) এবং ৯১.৪০ দ্রাঘিমাংশ (পূর্ব) সীতাকুণ্ড থানার অবস্থান।

থানা সদর হতে চট্টগ্রামের দুরত্ব ৩৭ কি.মি এবং ঢাকার দূরত্ব  ২২৭ কি.মি ।

সীতাকুণ্ডের নামকরন সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তী আছে। ইতিহাসের দৃষ্টিকোন থেকে নামকরনের সত্যতা সম্পর্কে জোরালোভাবে কিছু বলা যাবে না। হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে মনে করেন রামায়ন বর্ণিত সীতা এখানে আগমন করেন এবং একটি কুন্ডে স্নান করেন। সেই হতে সীতাকুণ্ডের নামের উৎপত্তি।

কারো কারো মতো রাম স্বয়ং তার পত্নীর নামেই সীতাকুণ্ড নামকরণ করেন। আবার কেহ কেহ মনে করেন দক্ষ রাজার মহাযজ্ঞের সময় ক্ষিপ্ত উম্মত্ত শিব তার পত্নী সতীর শবদেহ খন্ড বিখন্ড করেন এবং তার নামানুসারে সীতাকুণ্ড কালের বির্বতনে বিকৃত হয়ে সীতাকুণ্ড হয়। অর্থ্যাৎ হিন্দু ধর্মের পুরাণিক উপাখ্যানে নারদ মুনির ভূমিকা সর্বজন বিদিত।

নারদ মুনির ভূমিকা থেকে স্পষ্ট হয় যে দক্ষরাজার কন্যা পার্বতী মা বাবার অগোচরে ভালবেসে বিয়ে করেন শিবকে এতে রাজা ক্ষিপ্ত হয়ে ত্রিভূবনের সবাইকে আমন্ত্রন জানালেন। সেখানে শিবকে অপদস্ত করার জন্য তার মূর্তি বানিয়ে রাজপ্রাসাদের তোরনের বাহিরে প্রহরী হিসাবে রাখা হল। নারদ মুনি থেকে পার্বতী একথা জানতে পেরে নিজেই প্রত্যক্ষ করলেন এবং লজ্জায় অপমান দেহত্যাগ করলেন। পার্বতী বেঁচে নেই জেনে উম্মত্তপ্রায় শিব পার্বতীর মৃতদেহ মাথায় নিয়ে প্রলয় নাচন শুরু করলেন। এক পর্যায়ে বাহান্ন খন্ডে খন্ডিত পার্বতীর দেহ বাহান্ন স্থানে নিক্ষিপ্ত হয়ে বাহান্নটি তীর্থ কেন্দ্রের উদ্ভব হয়। তম্মধ্যে সীতাকুণ্ডও একটি। সতী পার্বতীর উরুসন্ধীর অংশ এখানে নিক্ষিপ্ত হয়েছে বলে কথিত আছে। তবে হিন্দু ও তান্ত্রিক গ্রন্থগুলোতে সীতাকুণ্ডের নাম সুস্পষ্ট নয়। এসব উপাখ্যান বৃটিশদের দলিল দস্তাবেজের মাধ্যমে জানা যায়।

আরও একটি তথ্য পাওয়া যায় এভাবে যে, পিতৃ আদেশে শ্রীরামচন্দ্র পত্নী সীতা দেবী ও কনিষ্ঠ ভ্রাতা লক্ষনকে নিয়ে বনবাসী হন এবং এখানে কিছুদিন অবস্থান করেন । সে সুবাধে তাদের নামানুসারে স্বয়ম্ভুনাথ মন্দিরের পাদদেশে রামকুণ্ড, লক্ষণকুণ্ড, সীতাকুণ্ড নামে তিনটি কুন্ড এবং একটি সীতার মন্দির ও বিদ্যামান ।

১৭৬১ সালের ৫ জানুয়ারী চট্টগ্রামের প্রথম ইরেজ চীফ নিযুক্ত হন হ্যারী যাত্রা বিরতিকালে সীতাকুণ্ড ক্যাম্প হতে পোর্ট উইলিয়ামের নিকট তিনি যে চিঠি লিখেন তাতে সীতাকোন নামে উল্লেখ দেখা যায়।

সীতাকুণ্ড বঙ্গভারতের হিন্দুদের পূণ্যভুমি তীর্থস্থান হিসেবে খ্যাত । প্রতি বৎসর শিবচতুর্দশী মেলা উপলক্ষে ভারত, বাংলাদেশ ও বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য তীর্থ যাত্রীর সমাগম ঘটে সীতাকুণ্ডে পূন্যতা লাভের জন্য ।

সীতাকুণ্ডে জন্ম নিয়েছেন যাত্রা অভিনেতা ও পরিচালক অমলেন্দু বিশ্বাস, বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন। রাজনীতিবিদ এবিএম আবুল কাসেম। রাজনীতিবিদ এল কে সিদ্দিকী। সংগীত শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। রাজনীতিবিদ দিদারুল আলম। বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আই জি পি, বোরহান সিদ্দিকী। রাজনীতিবিদ ও দেশের প্রথম বাণিজ্যমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকীসহ অসংখ্য উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। 

দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় বনাঞ্চল, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, চন্দ্রনাথ পাহাড়, চন্দ্রনাথ মন্দির, বার আউলিয়া দরগাহ শরীফ (সোনাইছড়ি), বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো-পার্ক, ব্যাসকুণ্ড (সীতাকুণ্ড সদর), সহস্রধারা ঝর্ণা, সুপ্তধারা ঝর্ণা, হাম্মাদিয়ার মসজিদ, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা, ভাটিয়ারী গলফ এন্ড কাউন্টি ক্লাব, বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমী।

What do you think?

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

চট্টগ্রামের পর্তুগিজ নগরী ‘অংগারকেল’ কোথায় ছিল?

চট্টগ্রামের পর্তুগিজ নগরী ‘অংগারকেল’ কোথায় ছিল?

সন্দ্বীপের অজানা ইতিহাস