চন্দনাইশ উপজেলার নামকরণ সম্পর্কিত অনেক তথ্য পাওয়া যায়। তারমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় তথ্য হচ্ছে মুন্সেফ বাজারে বার্মা (বর্তমান মায়ানমার) এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ হতে আগত বণিকেরা এ অঞ্চলে উৎপাদিত সুদৃশ্য ও সুগন্ধী চন্দনের আঁশযুক্ত কাঠের ব্যবসা করত। কথিত আছে চন্দন কাঠের নামানুসারে এ অঞ্চলের নামকরণ করা হয় চন্দনাইশ।একদা চন্দনাইশ ছিল পটিয়া উপজেলা অবিচ্ছেদ্য অংশ।
প্রাচীন সনাতনী ধর্ম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বসবাস থাকলেও বর্তমানে চন্দনাইশ এলাকায় মুসলমানের সংখ্যা অনেক বেশি। হিন্দুধর্মীয় তীর্থ শুকাম্বার দিঘী, মন্দির, বারুণী স্নান, বৌদ্ধ ধর্মীয় স্মৃতির মন্দির ও এক সময়ের লওলীবাগ। প্রাচীন এই জনপদে কখন থেকে মুসলমান আগমন ঘটে তা স্পষ্ট বলা কঠিন। তবে গবেষণায় জানা যায় পাহাড়ী জনপদ কাঞ্চননগরে হযরত মোস-তান আলী (রহ.) ও হযরত তাজ এ আলী (রহ.), চাঁনখালীতে হযরত মহসেন শাহ আরবী ফকির (রহ.), দোহাজারী জনপদে হযরত সৈয়দ জালাল আল দ্বীন বোখারী (রহ.) পবিত্র ইসলাম ধর্মের বার্তা নিয়ে এ অঞ্চলে আগমন করেন। তবে চট্টগ্রামে মুসলমান আগমন ঘটে স্বয়ং রাসূল (সা.) এর জামানায় হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.) মাধ্যমে। তিনি সাগর পথে ১৪ জন সাহাবায়ে রাসূলের দল নিয়ে চট্টগ্রামে আসেন। পরে তাঁরা ভারতের মনিপুর হয়ে চীন গমন করেন।
আরেকটি মতে বলা হয়, রাজা সুহ্মা তাঁর রাজ্য পরিচালনার সময়ে এই অঞ্চলের পাহাড়ে চন্দন কাঠ জন্মাতো। চন্দন কাঠ অতি মূল্যবান। এই কাঠের সুগন্ধে মানুষ বিমোহিত হত। এই কাঠের তৈরী আসবাব পত্র ছিলো সমগ্র পৃথিবী জুড়ে পরিচিত। চন্দন কাঠ দিয়ে আসবাব পত্র ও জাহাজ তৈরী হতো। এই চন্দন কাঠের কারণে পরবর্তীতে চন্দনাইশ নাম করণ হয় বলে অনেকের ধারণা। দোহাজারী থেকে এই কাঠ সমুদ্রবর্তী একটি দ্বীপে নিয়ে যেত। ওখানেই আসবাব পত্র নৌকা ও অন্যান্য কাঠের সমগ্রী তৈরী হতো। সেই দ্বীপের নামকরণ হয় চন্দন দ্বীপ নামে।
দোহাজারী পূর্বদিকে বান্দারবান সংলগ্ন গহীন জঙ্গলে চন্দন পাহাড় নামে একটি পাহাড় ও মৌজাও রয়েছে। অন্যদিকে খুলনার কাছাকাছি এলাকায় চন্দন দ্বীপ নামে একটি দ্বীপের নামও ইতিহাসে পাওয়া যায়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও চন্দনাইশ সৃষ্টির ইতিহাস কিন্তু আলাদা প্রক্রিয়ার ভিন্ন ভৌগলিক পরিব্যাপ্তি রয়েছে। পটিয়া-চন্দনাইশ এলাকার মাটি সঞ্চয়নের ইতিহাস আরাকান, বার্মা, পেগু, নেপাল, পার্বত্য বান্দরবান প্রভৃতির সাথে যুক্ত। কারণ চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূ-ভাগটি মূলত হিমালয় উদ্ভুত, বাংলাদেশের বাকি অংশের সৃষ্টি-গঠনের সঙ্গে এর কোনো প্রকৃতি এবং সৃষ্টি প্রক্রিয়াগত মিল নেই। বরেন্দ্র এলাকার বয়সের চেয়েও চন্দনাইশ-চট্টগ্রাম এলাকার বয়স অনেক বেশি বলে ঐতিহাসিকদের ধারণা।