in

চাটগাঁইয়া ভাষা: একটি বিশদ আলোচনা

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ যে ভাষায় কথা বলেন, তা শুনে কি কখনো আপনার মনে হয়েছে যে এটি বাংলা হলেও ঠিক যেন বাংলার মতো নয়? এই লেখায় আমরা সেই অনন্য চাটগাঁইয়া ভাষা নিয়ে আলোচনা করব। এটি কেন প্রমিত বাংলার থেকে আলাদা, এর নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য কী কী, এবং ঐতিহাসিকভাবে এর পেছনে কী গল্প লুকিয়ে আছে—সেইসব বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানব।

অনেকেই হয়তো জানেন না, চাটগাঁইয়া ভাষার নিজস্ব এক জগৎ আছে। প্রমিত বাংলার সাথে এর উচ্চারণের ফারাক কেন এত বেশি, কেন আমরা এই ভাষা সহজে বুঝতে পারি না, আর কেনই বা ‘চাটগাঁইয়া’ স্বতন্ত্র ভাষার মর্যাদা পাওয়ার দাবি রাখে—সেইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজব আমরা। একইসাথে, সময়ের সাথে সাথে এই ভাষাটি কীভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে এবং এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কতটা জরুরি, সেই সামাজিক-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও আপনাদের সামনে তুলে ধরব। আসুন, আমাদের সাথে এই ভাষাতাত্ত্বিক যাত্রায় যোগ দিন, আর আবিষ্কার করুন চাটগাঁইয়া ভাষার অচেনা রহস্য!

 

১. পরিচিতি ও ভাষাতাত্ত্বিক শ্রেণিবিন্যাস

১.১ ভাষার সংজ্ঞা, অবস্থান ও ভৌগোলিক বিস্তার

চাটগাঁইয়া, যা স্থানীয়ভাবে চিটাইঙ্গা নামেও পরিচিত (উচ্চারণ: [saŋʈgaiyaŋ] বা [siʈaiŋga]), হলো বাংলাদেশের বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রচলিত একটি ইন্দো-আর্য ভাষা 1। এটি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ির মতো অঞ্চলে স্থানীয় বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর প্রধান কথ্য ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় 2। এর বিপুল সংখ্যক বক্তা মূলত বাংলাদেশে বসবাস করে 1

 

১.২ ভাষাতাত্ত্বিক শ্রেণিবিন্যাস এবং ঐতিহাসিক অবস্থান

চাটগাঁইয়া ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের ইন্দো-ইরানীয় শাখার অন্তর্গত 1। উপ-শাখা বিন্যাসে এটি ইন্দো-আর্য → পূর্বাঞ্চলীয় → বাংলা-অসমিয়া → গৌড়-বাংলা → দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত 1

ঐতিহাসিকভাবে, ভাষাবিদ জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সন ১৯০৩ সালে চাটগাঁইয়াকে নোয়াখালী এবং আরাকানের উপভাষার সঙ্গে ‘দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা’ উপভাষার অধীনে শ্রেণিবদ্ধ করেন 1। পরবর্তীতে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ১৯২৬ সালে এটিকে মগধী প্রাকৃতের পূর্বাঞ্চলীয় ‘বঙ্গীয়’ গোষ্ঠীতে স্থান দেন এবং মত প্রকাশ করেন যে বাংলার সকল উপভাষা সাধু ভাষা বা সাহিত্যিক বাংলা থেকে উদ্ভূত হয়নি, বরং প্রত্যেকেই স্বাধীনভাবে বিকশিত হয়েছিল 1। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে বোঝা যায় যে চাটগাঁইয়া ভাষা কেন্দ্রীয় বাংলা ধারা থেকে বহুলাংশে স্বাধীনভাবে বিবর্তিত হয়েছে।

১.৩ বক্তা সংখ্যা, মর্যাদা ও লিখন পদ্ধতি

চাটগাঁইয়া ভাষার স্থানীয় বক্তার সংখ্যা পৃথিবীর অনেক স্বতন্ত্র ভাষার চেয়েও বেশি। ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, এই ভাষার বক্তার সংখ্যা প্রায় ১৩ মিলিয়ন থেকে ১৬ মিলিয়ন পর্যন্ত হতে পারে 1। আন্তর্জাতিক ভাষাভান্ডার ‘এথনোলগ’ (Ethnologue)-এর ২২তম সংস্করণের ভিত্তিতে ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট এটিকে বিশ্বের সর্বাধিক কথিত ভাষার তালিকায় ৮৮তম স্থানে অন্তর্ভুক্ত করে, যেখানে বক্তা সংখ্যা ছিল ১৩ মিলিয়ন 5। ২০১৭ সালে গ্লোটোলগ ৩.০-তেও এই ভাষার উপস্থিতি নথিভুক্ত করা হয় 6

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চাটগাঁইয়া ভাষার বক্তা সংখ্যা এত বিপুল হওয়া সত্ত্বেও 1, এটি বাংলাদেশের কোনো দাপ্তরিক বা একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ভাষা নয় 6। এই ভাষার কোনো আনুষ্ঠানিক বা শিক্ষাগত মর্যাদা না থাকা সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক ভাষাতাত্ত্বিক সংস্থাগুলি 3 এটিকে একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই দ্বিচারিতা নির্দেশ করে যে ভাষাটির ঐতিহাসিক শ্রেণিবিন্যাস এটিকে বাংলার উপভাষা হিসেবে চিহ্নিত করলেও, এর কাঠামোগত ভিন্নতা এবং বৃহৎ জনমিতি এটিকে স্বতন্ত্র ভাষার মর্যাদা প্রদান করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির অভাবের কারণে এই ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয় না, যা ভাষাটির সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয় সমর্থনের ঘাটতি প্রতিফলিত করে এবং এর সামাজিক মর্যাদার হ্রাস ঘটায় 6

ঐতিহ্যগতভাবে, চাটগাঁইয়া বাংলা লিপি, আরবি এবং ল্যাটিন লিপিতে লেখা হয়ে আসছে 1। বর্তমানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার প্রমাণস্বরূপ অ্যান্ড্রয়েডের জন্য জি-বোর্ডে চাটগাঁইয়া কীবোর্ড যুক্ত হয়েছে 1

 

২. ধ্বনিতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: স্বাতন্ত্র্যের ভিত্তি

চাটগাঁইয়া ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব প্রমিত বাংলা থেকে অত্যন্ত ভিন্ন, যা এর স্বাতন্ত্র্যের প্রধান কারণ এবং পারস্পরিক বোধগম্যতার অনুপস্থিতি ব্যাখ্যা করে 8। এই ধ্বনিগত বৈসাদৃশ্য কেবল উচ্চারণের ভিন্নতা নয়, বরং এর ধ্বনি ব্যবস্থায় মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। চাটগাঁইয়া ভাষায় সুরের ব্যবহার (Tonal Variations) এবং চাপের ধরণ (Stress Patterns) রয়েছে, যা অ-স্থানীয় বক্তাদের জন্য বোঝা কঠিন 3

 

২.১ মহাপ্রাণ ধ্বনির রূপান্তর ও ফ্রিকেটিভ ধ্বনির প্রাচুর্য

চাটগাঁইয়া ভাষার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মহাপ্রাণ ধ্বনিগুলির (aspirated stops) ব্যাপক রূপান্তর, যা হয় অল্পপ্রাণীভবন (De-aspiration) বা উষ্ম ধ্বনিতে (Fricativization) রূপান্তরের মাধ্যমে ঘটে 9

  • ঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনির পরিবর্তন: প্রমিত বাংলার ঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনি ‘ভ’ (/bʰ/) চাটগাঁইয়া ভাষায় অল্পপ্রাণ ‘ব’ (/b/) রূপে উচ্চারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রমিত বাংলার ‘ভালো’ শব্দটি চাটগাঁইয়া ভাষায় ‘বালা’ হিসেবে উচ্চারিত হয় 9
  • অঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনির পরিবর্তন: অঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনি ‘খ’ (/kʰ/) এবং ‘ফ’ (/pʰ/) যথাক্রমে ভেলার ফ্রিকেটিভ /x/ (আরবি ‘খ’-এর মতো) এবং ল্যাবিওডেন্টাল ফ্রিকেটিভ /f/ বা বিল্যাবিয়াল ফ্রিকেটিভ /ɸ/ রূপে উচ্চারিত হয় 1। প্রমিত বাংলার ‘খবর’ চাটগাঁইয়াতে /xobor/ এবং ‘ফোশ’ (পৌষ) /pʰoʃ/ হয় ‘ফোশ’ /faoʃ/ 2
  • ফ্রিকেটিভের প্রাচুর্য: চাটগাঁইয়া ধ্বনিতত্ত্বে ঘোষ ভেলার ফ্রিকেটিভ /ɣ/ এবং ঘোষ দন্ত্যমূলীয় ফ্রিকেটিভ /z/ সহ বিভিন্ন উষ্ম ধ্বনির একটি সমৃদ্ধ তালিকা রয়েছে 1। এই ধ্বনিগুলি প্রমিত বাংলা ধ্বনিতন্ত্রে অনুপস্থিত।

 

২.২ অ্যাফ্রিকেটের পরিবর্তন

প্রমিত বাংলার তালব্য বা দন্ত্যমূলীয় অ্যাফ্রিকেট ধ্বনিগুলি (যেমন ‘চ’ /t͡ʃ/ এবং ‘জ’ /d͡ʒ/) চাটগাঁইয়া ভাষায় নিয়মিতভাবে ফ্রিকেটিভ বা অ্যাফ্রিকেট ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়। ‘চ’ (/t͡ʃ/) প্রায়শই অঘোষ ফ্রিকেটিভ ‘স’ (/s/) বা অ্যাফ্রিকেট /t͡s/ রূপে উচ্চারিত হয়, এবং ‘জ’ (/d͡ʒ/) ঘোষ ফ্রিকেটিভ ‘জ’ বা ‘য’ (/z/) তে রূপান্তরিত হয় 9

এই ধ্বনিগত রূপান্তরগুলি কেবল একটি উপভাষার স্থানীয় উচ্চারণ বৈচিত্র্য নয়; বরং এগুলি একটি স্বতন্ত্র ধ্বনি ব্যবস্থার অস্তিত্ব প্রমাণ করে। /f/ এবং /x/ এর মতো ধ্বনির আগমন ইঙ্গিত দেয় যে চাটগাঁইয়া ভাষা বিবর্তনের সময় পার্শ্ববর্তী অ-ইন্দো-আর্য ভাষাগুলির সংস্পর্শে এসেছিল (যেমন আরাকানি), যা এর ধ্বনিগত কাঠামোকে আমূল পরিবর্তন করেছে এবং প্রমিত বাংলা থেকে এর দূরত্ব আরও বাড়িয়েছে 8

Table Title: ধ্বনিগত পরিবর্তন: প্রমিত বাংলা বনাম চাটগাঁইয়া ভাষা

প্রমিত বাংলা ধ্বনি (Standard Bengali)ধ্বনির ধরনচাটগাঁইয়া রূপ (Chittagonian Realization)IPA (চাটগাঁইয়া)উদাহরণ (প্রমিত ব./চাটগাঁইয়া)উৎস
অঘোষ মহাপ্রাণ (ফ) /pʰ/বিল্যাবিয়াল স্টপঅঘোষ ল্যাবিওডেন্টাল ফ্রিকেটিভ (ফ)[f] ~ [ɸ]ফাল্গুন /pʰalgun/ → ফঅওন /faɔon/2
ঘোষ মহাপ্রাণ (ভ) /bʰ/বিল্যাবিয়াল স্টপঘোষ অল্পপ্রাণ (ব)[b]ভালো /bʱalo/ → বালা /balo/9
অঘোষ মহাপ্রাণ (খ) /kʰ/ভেলার স্টপঅঘোষ ভেলার ফ্রিকেটিভ (খ)[x]খবর /kʰobor/ → খবর /xobor/1
ঘোষ অ্যাফ্রিকেট (জ) /dʒ/অ্যাফ্রিকেটঘোষ ফ্রিকেটিভ (জ)[z]1

 

৩. রূপতত্ত্ব ও বাক্যবিন্যাস

চাটগাঁইয়া ভাষার রূপতাত্ত্বিক এবং বাক্যবিন্যাসগত কাঠামো প্রমিত বাংলার সাথে কিছু সাদৃশ্য রাখলেও, এর মৌলিক ভিন্নতাগুলি ভাষাগত বিচ্ছিন্নতার পক্ষে যুক্তি তৈরি করে।

 

৩.১ বাক্য গঠন এবং নেতিবাচক ক্রিয়ার অবস্থান

চাটগাঁইয়া ভাষা কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া (Subject-Object-Verb বা SOV) এই মৌলিক বাক্যক্রম অনুসরণ করে 3। উদাহরণস্বরূপ, ‘ইঁতারা (তারা) খ্যালা (খেলা) খ্যালের (খেলছে)’ বাক্যটিতে কর্তা, কর্ম এবং ক্রিয়ার এই ধারাটি পরিলক্ষিত হয় 6

তবে, নেতিবাচক বাক্যের গঠন চাটগাঁইয়া ভাষার একটি স্বতন্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। প্রমিত বাংলায় নেতিবাচক পদটি ক্রিয়াপদের পরে বসে (যেমন: ‘আমি খাই না’), কিন্তু চাটগাঁইয়া ভাষায় নেতিবাচক পদটি ক্রিয়াপদের আগে বসে (Pre-verbal Negation) 9। এই বৈশিষ্ট্যটি অসমিয়া ভাষার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ 9, যা পূর্বাঞ্চলীয় ইন্দো-আর্য ভাষার একটি প্রাচীন রূপকে সংরক্ষণ করে। এই প্রাক্-ক্রিয়া নেতিবাচকতা ইঙ্গিত দেয় যে চাটগাঁইয়া ভাষা প্রমিত বাংলার মতো একই উৎস থেকে বিবর্তিত হলেও, এর বিবর্তন পথ ছিল স্বতন্ত্র এবং তুলনামূলকভাবে স্বাধীন, যা এটিকে মধ্য বাংলার প্রভাব থেকে রক্ষা করেছে 1

 

৩.২ সর্বনাম এবং নির্দিষ্টতা নির্দেশকের ব্যবহার

চাটগাঁইয়া ভাষার সর্বনাম রূপগুলি প্রমিত বাংলা থেকে সুস্পষ্টভাবে ভিন্ন। উত্তম পুরুষের সর্বনাম ‘আমি’ চাটগাঁইয়াতে ‘আঁই’ বা ‘অ্যাঁই’ হয় 6। মধ্যম পুরুষ সম্মানসূচক সর্বনাম ‘আপনি’ চাটগাঁইয়াতে ‘অনে’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এবং ‘সে’ এর জন্য ‘ইতি’ বা ‘ইতে’ ব্যবহার করা হয় 2

এছাড়াও, নামপদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্টতা নির্দেশক (Definiteness Markers) এবং বহুবচন গঠনে চাটগাঁইয়া ভাষায় বৈচিত্র্য দেখা যায় যা প্রমিত বাংলা থেকে আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, বস্তুর নির্দিষ্টতা বোঝাতে ‘কেতি ইয়ান’ (ক্ষেত টি) এবং বহুবচন বোঝাতে ‘কেতি গিন’ (ক্ষেত গুলি) বা ‘কিতাপ উন’ (বই গুলি) এর মতো মার্কার ব্যবহৃত হয় 6

 

৩.৩ শব্দভান্ডার ও বৈদেশিক প্রভাব

চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের বন্দর নগরীর মর্যাদা থাকার কারণে এর শব্দভান্ডার ব্যাপক বৈদেশিক প্রভাব দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছে 8। গবেষণায় দেখা যায়, চাটগাঁইয়া ভাষায় প্রমিত বাংলার চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পর্তুগিজ, আরবি এবং ফার্সি ঋণকৃত শব্দ রয়েছে 8। এই কারণে চাটগাঁইয়া ভাষার নিজস্ব অনেক শব্দ রয়েছে যা প্রমিত বাংলায় অনুপস্থিত 10। এই ভাষাগত মিশ্রণ এবং স্বতন্ত্র আভিধানিক উপাদান চাটগাঁইয়াকে একটি ‘যোগাযোগকারী ভাষা’ (Contact Language) হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে, যা এর স্বতন্ত্র কাঠামোর পক্ষে যুক্তিকে শক্তিশালী করে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি স্পষ্ট করে যে চাটগাঁইয়াকে প্রমিত বাংলার বিকৃত রূপ হিসেবে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই 10

 

৪. ভাষা বনাম উপভাষা বিতর্ক

চাটগাঁইয়া ভাষার মর্যাদা ভাষাতত্ত্বের ক্ষেত্রে একটি চলমান বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এর কাঠামো, ধ্বনিতত্ত্ব এবং শব্দভান্ডারের ভিন্নতা একে উপভাষার সীমানা পেরিয়ে স্বতন্ত্র ভাষার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

 

৪.১ পারস্পরিক বোধগম্যতার অভাব

চাটগাঁইয়াকে স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে দেখার প্রধান যুক্তি হলো প্রমিত বাংলার সাথে এর পারস্পরিক বোধগম্যতার অনুপস্থিতি। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, যদি দুটি ভাষা পারস্পরিকভাবে বোধগম্য না হয়, তবে তাদের ভিন্ন ভাষা হিসেবে গণ্য করা উচিত 12। বাস্তবতা হলো, চাটগাঁইয়া ভাষার নিজস্ব বাক্যবিন্যাস এবং ধ্বনিগত রূপান্তরের কারণে ৯০% এরও বেশি বাংলাভাষী বক্তার পক্ষে এই ভাষা বোঝা অত্যন্ত কঠিন 8। এই ভাষাগত বিচ্ছিন্নতাই প্রমাণ করে যে চাটগাঁইয়া এবং প্রমিত বাংলা একই ঐতিহাসিক উৎস থেকে দুটি স্বতন্ত্র পথে বিবর্তিত হয়েছে।

এছাড়া, চাটগাঁইয়া ভাষার সাথে রোহিঙ্গা ভাষার বৃহৎ পারস্পরিক বোধগম্যতা রয়েছে 1। এই সংযোগ ভৌগোলিক নৈকট্য ও ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটায় এবং ইঙ্গিত দেয় যে চাটগাঁইয়া ভাষা ভাষাগতভাবে মধ্য বাংলার (রাঢ়ী/নদিয়া) তুলনায় আরাকানের দিকে বেশি সংযুক্ত। এই ভাষাগত প্রাচীরই চট্টগ্রামে ডাইগ্লসিয়া পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে 15

 

৪.২ সামাজিক প্রেক্ষাপটে দ্বৈত মর্যাদা (Diglossia)

পারস্পরিক বোধগম্যতার অভাবে চট্টগ্রামে একটি দ্বৈভাষিক পরিস্থিতি (Diglossic Situation) তৈরি হয়েছে, যেখানে প্রমিত বাংলা এবং চাটগাঁইয়া উভয়ের ব্যবহারই প্রচলিত 15। সাধারণত, স্থানীয়রা অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে চাটগাঁইয়া ব্যবহার করলেও, উচ্চশিক্ষা, প্রশাসন এবং আনুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা ব্যবহার করতে বাধ্য হন। এই পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে চাটগাঁইয়া ভাষার মর্যাদা শুধুমাত্র ঘরোয়া পরিবেশে সীমাবদ্ধ, আর প্রমিত বাংলা হলো সফলতা ও আনুষ্ঠানিকতার ভাষা।

 

৪.৩ উপ-আঞ্চলিক ভিন্নতা

চাটগাঁইয়া ভাষা একটি একক রূপে সীমাবদ্ধ নয়। এই ভাষার মধ্যে অন্তত পাঁচটি প্রধান উপ-উচ্চারণ (accents) বিদ্যমান, যা উত্তর চাটগাঁইয়া, দক্ষিণ চাটগাঁইয়া, চট্টগ্রাম শহর চাটগাঁইয়া এবং বড়ুয়া চাটগাঁইয়া রূপে বিভক্ত 2। এছাড়া, মিরেরসরাই উপজেলার মতো কিছু এলাকায় চাটগাঁইয়া ও নোয়াখালীর ভাষার মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়, যা ভাষাগত সীমানার জটিলতা এবং ধারাবাহিকতা নির্দেশ করে 16

 

৫. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়া

চট্টগ্রামের বন্দর নগরী হিসেবে দীর্ঘ ইতিহাস এবং আরাকানি রাজ্যের সাথে এর সংযোগ চাটগাঁইয়া ভাষার সামাজিক ও ঐতিহাসিক বিবর্তনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

 

৫.১ আরাকানি এবং পালি ভাষার ঐতিহাসিক প্রভাব

চট্টগ্রাম অঞ্চল দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন শক্তির (যেমন ত্রিপুরা, আরাকান এবং মুঘল) ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিল 17। ১৫৮৬ সালের দিকে আরাকানিরা এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় 17। আরাকানের এই দীর্ঘ প্রভাব চাটগাঁইয়া ভাষার শব্দভান্ডার এবং ধ্বনিতত্ত্বে পরিলক্ষিত হয়।

এই ঐতিহাসিক সংযোগের ফলস্বরূপ ‘ভইঙ্গা’ (Bhoinga) শব্দের উৎপত্তি। এই শব্দটি পালি ভাষার ‘বঙ্গিয়া’ (বঙ্গ + ইয়া) থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘বাঙালি-ভাষী’ 17। আরাকানি শাসনের সময় অ-আরাকানি শাসিত বাংলা অঞ্চলের মানুষকে বোঝাতে শব্দটি ব্যবহৃত হতো। এই শব্দটি ভাষাগতভাবে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতির সাথে চট্টগ্রামের মানুষের ঐতিহাসিক পার্থক্যকে চিহ্নিত করে।

 

৫.২ ‘ভইঙ্গা’ শব্দের সামাজিক ব্যবহার এবং জাতিগত বিভেদ

ঐতিহাসিকভাবে একটি জাতিবাচক আঞ্চলিক শব্দ হলেও, আধুনিক চট্টগ্রামে ‘ভইঙ্গা’ শব্দটি প্রায়শই অপমানসূচক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয় 17। এই শব্দটি সেইসব ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে ব্যবহার করা হয় যারা স্থানীয় নয় বা চাটগাঁইয়া ভাষা সাবলীলভাবে বলতে পারে না 17

এই শব্দের ব্যবহার স্থানীয়দের মধ্যে এক ধরণের সামাজিক অহমিকা (‘জাতিগত অভিমান’ বা jatiabhimaan) তৈরি করেছে 17। স্থানীয়রা নিজেদেরকে উদার এবং জমিদারসুলভ হিসেবে মনে করে, আর ‘ভইঙ্গা’ হিসেবে চিহ্নিত বহিরাগতদের কৃপণ বা বহিরাগত হিসেবে দেখা হয়। এই সামাজিক বিভেদ স্থানীয়দের কাছে প্রমিত বাংলা এবং কেন্দ্রীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করে 17। এর ফলস্বরূপ, স্থানান্তরিত অধিবাসীরা সমাজে মিশে যাওয়ার জন্য হয় তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার এড়িয়ে চলেন, নয়তো চাটগাঁইয়া ভাষার কিছু শব্দ শেখার চেষ্টা করেন 17। এই সামাজিক চাপ ভাষা স্থানান্তরের বিপরীতে স্থানীয় ভাষাকে জীবন্ত রাখার জন্য একটি শক্তিশালী মনস্তাত্ত্বিক উপাদান হিসেবে কাজ করে।

 

৬. গণমাধ্যম, সংস্কৃতি ও ভাষা-সংকট

চাটগাঁইয়া ভাষা স্থানীয় সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী বাহক হলেও, প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির অভাবে এটি গভীর সংকটের সম্মুখীন।

 

৬.১ গণমাধ্যমে ব্যবহার এবং সাংস্কৃতিক প্রতিফলন

চাটগাঁইয়া ভাষার স্থানীয় প্রচার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। বাংলাদেশ বেতার এবং বিটিভি চট্টগ্রাম চাটগাঁইয়া ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে 2। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম, যেমন বিতর্ক প্রতিযোগিতা 18, এবং গানেও এই ভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এটি স্থানীয় শিল্প এবং পরিচয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত। গণমাধ্যমে ভাষাটির উপস্থিতি সাংস্কৃতিক সংযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করলেও, এটি এর আনুষ্ঠানিক মর্যাদা বৃদ্ধি করতে যথেষ্ট নয়।

 

৬.২ ভাষা সংরক্ষণের উদ্যোগ ও শিক্ষার অভাব

এই ভাষার গুরুত্ব সত্ত্বেও, চাটগাঁইয়া ভাষা বিদ্যালয়ে শিক্ষাদান করা হয় না 7, যা ভাষা স্থানান্তরের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় ভাষাটির অনুপস্থিতি এর সামাজিক ক্ষমতাকে হ্রাস করেছে, কারণ কর্মসংস্থান এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রমিত বাংলা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

তবে, স্থানীয় পর্যায়ে সংরক্ষণের প্রচেষ্টা লক্ষ্যণীয়। নূর মোহাম্মদ রফিক নামের একজন লেখক “চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান” তৈরি করেছেন 16। এছাড়া, অনলাইনে Glosbe-এর মতো প্ল্যাটফর্মে বাংলা-চাটগাঁইয়া অভিধান এবং বিভিন্ন টিউটোরিয়াল উপলব্ধ রয়েছে, যা কমিউনিটি-ভিত্তিক সংরক্ষণের উদ্যোগকে নির্দেশ করে 20। এই ধরনের উদ্যোগ স্থানীয় গবেষক ও কমিউনিটির সচেতনতা প্রমাণ করে যে তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী শব্দভান্ডার ও কাঠামো নথিভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে।

 

৬.৩ ভাষা-স্থানান্তর এবং অস্তিত্বের সংকট

বর্তমানে চাটগাঁইয়া ভাষা ভাষা-স্থানান্তরের (Language Shift) গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে 15। চট্টগ্রাম শহরের জনগোষ্ঠী ক্রমবর্ধমানভাবে প্রমিত বাংলা ব্যবহারে অভ্যস্ত হচ্ছে, যা ভাষাটির স্থানীয় ব্যবহারের ক্ষেত্রকে সংকুচিত করছে। স্থানীয় জনগণ পরিস্থিতির ভিত্তিতে চাটগাঁইয়া বা প্রমিত বাংলা ব্যবহার করে থাকেন, যা ডাইগ্লসিয়ার উচ্চ মর্যাদার ক্ষেত্রে প্রমিত বাংলার আধিপত্য নির্দেশ করে।

গবেষণায় সতর্ক করা হয়েছে যে যদি এই ভাষা-স্থানান্তরের প্রবণতা চলতে থাকে, তবে চাটগাঁইয়া ভাষার অস্তিত্ব বিলুপ্তির দিকে যেতে পারে 15। ভাষা হারানোর এই প্রক্রিয়া কেবল ভাষাগত ক্ষতিই নয়, বরং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বহু শতাব্দীর সংস্কৃতি, সাহিত্য এবং স্থানীয় পরিচিতিও হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে। এই সংকট মোকাবিলায় বক্তাদের দ্বারা ভাষার ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ অব্যাহত রাখা অপরিহার্য।

 

৭. উপসংহার ও নীতিগত প্রস্তাবনা

চাটগাঁইয়া ভাষা ইন্দো-আর্য ভাষার একটি স্বতন্ত্র সত্তা, যার উৎপত্তি এবং বিবর্তন প্রমিত বাংলা থেকে ভিন্ন পথে ঘটেছে। এর স্বতন্ত্র ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য (মহাপ্রাণ ধ্বনির হ্রাস এবং ফ্রিকেটিভের ব্যবহার) এবং রূপতাত্ত্বিক গঠন (যেমন প্রাক্-ক্রিয়া নেতিবাচকতা) একে প্রমিত বাংলা থেকে কাঠামোগতভাবে বিচ্ছিন্ন করেছে, যার ফলস্বরূপ পারস্পরিক বোধগম্যতার অভাব পরিলক্ষিত হয়।

ভাষাতাত্ত্বিকভাবে একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে বিবেচিত হলেও, এর কোনো দাপ্তরিক স্বীকৃতি না থাকা এবং প্রমিত বাংলার সামাজিক-অর্থনৈতিক আধিপত্যের কারণে চাটগাঁইয়া ভাষা বর্তমানে ভাষা-স্থানান্তরের তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছে। ‘ভইঙ্গা’ শব্দের মতো সামাজিক সূচকগুলি স্থানীয় সাংস্কৃতিক পরিচিতি সংরক্ষণের জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করলেও, তা দীর্ঘমেয়াদী ভাষা বিলুপ্তি ঠেকাতে যথেষ্ট নয়।

ভাষাগত বৈচিত্র্য রক্ষা এবং একটি বিপুল জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত নীতিগত পদক্ষেপগুলি গ্রহণের সুপারিশ করা হলো:

১. প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি: চাটগাঁইয়া ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক স্বাতন্ত্র্য স্বীকার করে এটিকে আঞ্চলিক বা প্রথম ভাষা হিসেবে দাপ্তরিক মর্যাদা প্রদান করা উচিত।

২. শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তি: স্থানীয় পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে চাটগাঁইয়া ভাষার শিক্ষা এবং পাঠক্রমের অংশ হিসেবে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত, যেন নতুন প্রজন্ম ঐতিহ্যবাহী ভাষা সংরক্ষণে উৎসাহিত হয়।

৩. নথিপত্র এবং গবেষণা: চাটগাঁইয়া ভাষার ওপর আরও গভীর ভাষাতাত্ত্বিক গবেষণা পরিচালনা করা এবং এর শব্দভান্ডার, রূপতত্ত্ব ও ধ্বনিতত্ত্বের বিস্তারিত নথিপত্র প্রস্তুত করা অত্যাবশ্যক। স্থানীয়ভাবে তৈরি অভিধানগুলির (যেমন “চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান”) সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।

৪. গণমাধ্যম সহযোগিতা: বাংলাদেশ বেতার এবং বিটিভি চট্টগ্রামের মতো গণমাধ্যমগুলি যেন চাটগাঁইয়া ভাষায় অনুষ্ঠানের সংখ্যা এবং মান বাড়ানোর জন্য সরকারি সহযোগিতা লাভ করে, যা ভাষাটিকে আরও শক্তিশালী সাংস্কৃতিক মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।

৫. সামাজিক সচেতনতা: স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ভাষাগত ঐতিহ্য রক্ষায় সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত, যাতে ভাষা-স্থানান্তরের ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং ভাষার সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

রেফারেন্স: 

  1. Chittagonian language – Wikipedia
  2. চাটগাঁইয়া ভাষা – উইকিপিডিয়া
  3. Chittagonian – Accent Network
  4. Ethnologue: Top 100 Languages by Population – Harper College 
  5. Chittagonian, Sylheti ranked among 100 most spoken languages worldwide – Dhaka Tribune 
  6. চাঁটগাঁইয়া ভাষা
  7. Chittagonian Language (CTG) – Ethnologue 
  8. Chittagonian Language: Unique Identity Beyond Dialects – Wiki Bangla 
  9. Chittagonian Variety: Dialect, Language, or Semi-Language?
  10. (PDF) Chittagonian Variety: Dialect, Language, or Semi-Language? – ResearchGate
  11. চাটগাঁইয়া বাক্যাংশ বই – উইকিভ্রমণ
  12. একটা চাঁটগাঁইয়া লোক চাঁটগাঁইয়া ভাষা বেশি বলে, খাঁটি শুদ্ধভাষা এবং ৮৫% ইংরেজি পারে। চাঁটগাঁইয়া ভাষা কি ইংরেজি এবং শুদ্ধভাষা ভুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে?  
  13. চাঁটগাইয়্যা ভাষা কতটুকু কঠিন? এই ভাষাতে কি কিছু কিছু প্রমিত বাংলার শব্দ আছে?
  14. Are Sylheti, Chittagonian and Rangpuri their own languages? : r/bangladesh – Reddit 
  15. Language Shift and Maintenance of Chittagonian Language towards Standard Bengali Language – Asian Research Association
  16. চাটগাঁয়া উপভাষা মার্জিত বাংলা ভাষা থেকে কতটা আলাদা? – Quora
  17. চাটগাঁইয়াদের চোখে ‘ভইঙ্গা’ কারা? কেনই-বা এই নাম?
  18. ঢাবিতে বরিশাল-নোয়াখালী-চট্টগ্রামসহ ৬ আঞ্চলিক ভাষার বিতর্ক (ভিডিও) – The Daily Campus
  19. চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মজার বিতর্ক | Cplus – YouTube
  20. বাংলা – Chittagonian অভিধান | Glosbe
  21. চট্টগ্রামের ভাষা শিখুন শুদ্ধ বাংলা দিয়ে – চিটিগনিয়ান ভাষা – Chittagong Language – Chatgaya Bhasha – YouTube

What do you think?

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

      চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা