প্রিয় চট্টগ্রামবাসী, বর্ষা আসছে! বসন্ত কিছুদিন আগে এসে গেছে, বর্ষাও চলে আসবে। মনে করিয়ে না দিলে পরে বলবেন কেউ মনে করিয়ে দেয়নি। চারপাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছেনা এবারের বর্ষা মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত। ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রস্তুতি নিন।
চট্টগ্রাম শহরের প্রধানতম সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ জলাবদ্ধতা বর্ষা আসলেই জীবনমরণ সমস্যা হিসাবে দেখা দেয়। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে শহরের অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। মানুষের চলাচল থমকে যায়। বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার এ সমস্যা থাকলেও এ থেকে মুক্তি মিলছে না। জনপ্রতিনিধিরা আসে যায়। আশ্বাসও মেলে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা মেলা ভার! প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
বরাদ্দ হয় কোটি কোটি টাকা। কিন্তু বৃষ্টি কিংবা বর্ষায় মানুষকে ঠিকই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গত ঈদুল ফিতরের দিনেও আধঘণ্টার বর্ষণে দুই নম্বর গেট, মুরাদপুরসহ শহরের নানা স্থান হাঁটু পরিমাণ পানিতে তলিয়ে যায়। কষ্টে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। জলাবদ্ধতায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে কিংবা অফিসগামী মানুষের কষ্ট আরও বৃদ্ধি পায়। কিছু কিছু যানবাহন চললেও মাঝপথে স্টার্ট বন্ধ হলে জলজটের সঙ্গে যানজট লেগে যায়। তাছাড়া, অনেকসময় পানিতে চলতে গিয়ে উল্টে যায় গাড়ি। আহত হয় যাত্রীসাধারণ।
জলাবদ্ধতার এ সমস্যা থেকে নগরবাসী কবে মুক্তি পাবে বলা মুশকিল। জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। নগরীর খালগুলো উদ্ধার করে পানি চলাচলের উপযোগী করতে পারলে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমবে বলে মনে করি। তাছাড়া, নালা-নর্দমা ভরাট করে যারা বিল্ডিং নির্মাণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রভাবশালী এবং পেশিশক্তির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করাটাই চ্যালেঞ্জ।
বর্ষার প্রস্তুতি আমাদের সবাইকে নিজ নিজ উদ্যোগে নিতে হবে, সচেতন হতে হবে সেটা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। এই পোস্টে আমরা কিছু বিষয় একটু সার্কাস্টিক ভাবে উপস্থাপন করেছি। কিন্তু বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়া আমাদের কারো উচিৎ না।
#1 বিদেশ থেকে ট্র্যাকার আনান।
বিদেশ থেকে ট্র্যাকার আনান। ট্র্যকার নিজের সাথে রেখে বাসায় সেটার এক্সেস রাখুন। যাতে আপনি হারিয়ে গেলেও বাসার লোকজন সহজে খুঁজে পেতে পারে। খালে পড়ে মানুষ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা গত কয়েকবছরে অসংখ্য!
#2 কুইক ড্রাই কাপড় চোপর কিনে রাখুন।
কুইক ড্রাই কাপড় চোপর কিনে রাখুন। অফিসে যেতে একবার ভিজবেন, আসার পথে আবার ভিজবেন। দ্রুত কাপড় শুকাতে কুইক ড্রাইয়ের বিকল্প নেই। বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা এসব বলে অফিস ফাঁকি দিতে পারবেন না।
#3 শুঁকনো খাবার মজুদের পরিকল্পনা রাখুন।
শুঁকনো খাবার মজুদের পরিকল্পনা রাখুন। কে জানে কয়দিন বাজারে যেতে পারবেন না! শুধু বর্ষা বলে না। বছরের যেকোন সময় ড্রাই ফ্রুট স্বাস্থ্যকর।
#4 পার্কিং এ ছোট্ট নৌকা রাখুন।
পার্কিং এ ছোট্ট নৌকা রাখুন। হাওর অঞ্চলের মানুষ নিজেদের ব্যবহারের জন্য নৌকা রাখে। আমাদেরকেও রাখতে হবে।
#5 মোবাইল, ক্যামেরা, মানিব্যাগের নিরাপত্তায় ওয়াটারপ্রুপ ব্যাগ
মোবাইল, ক্যামেরা, মানিব্যাগের নিরাপত্তায় ওয়াটারপ্রুপ ব্যাগ নিয়ে রাখুন। ছেলে বুড়ো সবার কাছেই মোবাইল থাকে। যারা ভ্লগিং করে, সাংবাদিক তাদের কাছে ক্যামেরাও থাকে। অনেকের কাছে আবার শেষ সম্বল। বাঁচানোর যাবতীয় ব্যবস্থা নিন।
#6 লকার সিস্টেম জুতা জরুরী।
লকার সিস্টেম জুতা জরুরী। ডুবন্ত রাস্তায় কখন জুতা চলে যাবে টের পাবেন না। আবার জুতার তলা ঠিক না থাকলে চিরিত করে পড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। আগে থেকে ভাবুন।
#7 কিছু টাকা পয়সা জমান
যারা পাঠাও, উবার, সিএনজি চালান বা দিনে এনে দিনে খান তারা কিছু টাকা পয়সা জমা রাখুন। শহর লক হয়ে গেলে খাবেন কি? তাছাড়া একটু সেভিংস থাকা সবসময় ভালো প্র্যাক্টিস।
#8 রাস্তাঘাট দেখে চলুন
যে পথে নিয়মিত যাতায়াত করেন সে পথ ভালো করে দেখে রাখুন। প্রয়োজনে ভিডিও করে এনে প্রতিরাতে একবার দেখুন। মাঝেমধ্যে চোখ বন্ধ করে হেঁটে দিন। প্র্যাকটিস করতে হবে বাঁচতে হলে।
#9 লাঠির ব্যবস্থা রাখুন
রেডিমেড কিনতে পাওয়া গেলে কিনে রাখুন অথবা গ্রামের বাড়ি থেকে সুন্দর, শক্ত, মজবুত লাঠি এনে রাখুন। পানিতে শহর ঢুবে গেলে লাঠিই হবে আপনার পথ পদর্শক। সিজনাল ব্যবসায়ীরা ব্যবসার উদ্যেশেও লাঠি মজুদ করতে পারেন।
#10 ইমার্জেন্সিতে গাড়ি স্টার্ট করা শিখুন
বাইক বা প্রাইভেট কার যাদের আছে তারা শিখে নিন কিভাবে ইঞ্জিনে পানি ঢুকলে সেটা বের করে আবার গাড়ি চালু করবেন।
#11 যারা খুলশিসহ বিভিন্ন উঁচু এলাকায় থাকে তাদের শ্রদ্ধা করুন
যারা খুলশিসহ বিভিন্ন উঁচু এলাকায় থাকে তাদের শ্রদ্ধা করুন। বিপদে বন্ধুর পরিচয়। সবসময় উঁচু এলাকায় থাকা বন্ধু বান্ধবের সাথে ভাব জমিয়ে রাখুন। না হয় সময় মতো জলে ডুবে থাকবেন।
#12 প্ল্যাস্টিক ব্যবহারে সচেতন হোন
সবচেয়ে গুরত্বপূর্ন পয়েন্ট হচ্ছে প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতন হওয়া। চট্টগ্রামের নদী নালা খাল সব ভয়ঙ্করভাবে প্লাস্টিকে আক্রান্ত। এই প্লাস্টিক ভিনদেশের কেউ এসে ফেলছেনা। আমরাই এর জন্য দায়ী। আমরা সচেতন না হলে কতৃপক্ষের কিছু করার নেই। প্রতিবছর ড্রেন পরিষ্কার করেও কোন লাভ হবেনা যদি আমরা সচেতন না হই।
Leave a Reply